মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন

android apple
signal

August 15, 2025 1:07 PM

printer

৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লির লালকেল্লায় ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন

ভারতের ৭৯-তম স্বাধীনতা দিবস আজ যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লির লালকেল্লায় ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

এর আগে তিনি রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে গিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করেন। করা হয় ২১ বার তোপধ্বনি

লালকেল্লার প্রাকার থেকে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার মহাপর্ব আসলে সংকল্পের এক মহা উৎসব। দেশের সংবিধান প্রণেতারা ভারতকে শক্তিশালী গণতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পাহাড় থেকে মরুভূমি সর্বত্র আজ মাতৃভূমির জয়গান শোনা যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ঐক্যের ধারণাকে ভারত মজবুত করেছে বলে শ্রী মোদী উল্লেখ করেন। এর জন্য সংবিধান প্রণেতাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

ভারতীয় সংবিধান রক্ষায় আত্মবলিদান দেওয়া ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর কথাও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নানা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের মধ্যে ডক্টর মুখার্জীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পন করেছেন।

প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশ আজ অনেক এগিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। শ্রী মোদী বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার তাদের পাশে দাঁড়ানোর সবরকম প্রয়াস চালাচ্ছে। তিনি অপারেশন সিঁন্দুরের বীর সৈনিকদের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। দেশের শত্রুদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই যোদ্ধারা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, তার জন্য দেশ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, পহেলগাঁও হামলার পর সারা দেশে ক্রোধের সঞ্চার হয়েছিল, তার পরিচয় পাওয়া গেছে অপারেশন সিঁন্দুরে। জঙ্গিরা যেভাবে ধর্ম বেছে বেছে স্ত্রী-সন্তানদের সামনে পর্যটকদের হত্যা করেছিল, তার জবাবে ভারতীয় সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে জঙ্গিঘাঁটিগুলি গুড়িয়ে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিনের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি গোষ্ঠী এবং তাদের আশ্রয়দাতাদের হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। ভারত কোনরকম পারমাণবিক হুমকি সহ্য করবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন জল এবং রক্ত এক সঙ্গে বইতে পারে না। সিন্ধু জলচুক্তি এক তরফা এবং অন্যায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

২-শো বছরের দাশত্ব ভারতকে পরনির্ভর এবং দরিদ্র করেছে। এই অবস্হায় দেশের কৃষকরাই অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। দেশ পরনির্ভরতা কাটিয়ে আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে চললে, তবে দেশের অগ্রগতি সম্ভব হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আত্মনির্ভরতা শুধুমাত্র আমদানী- রফতানির মধ্যে সীমাবন্ধ নেই, তা দেশের দক্ষতাকেও প্রভাবিত করে। জিএসটি ব্যবস্হার সংস্কারের কাজ সরকার করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এরফলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।

প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লার ভাষণে প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর বার বার জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, আজকের সংযুক্ত বিশ্বে এগিয়ে থাকার জন্য দ্রুত প্রযুক্তিকে গ্রহণ করা জরুরী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আজ সেমি কন্ডাক্টর ক্ষেত্রে অগ্রগতি করছে। এখন ভারতকেও মিশন মোডে এই ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই লক্ষে সরকার চারটি বৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে।

পরমাণু ক্ষেত্রেও ভারত অগ্রগতি করেছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে বর্তমান ক্ষমতায় ১০ গুণ বেশি পরমাণু সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ভারত অর্জন করেছে বলে তিনি জানান।

সারা দুনিয়ায় যখন বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে চিন্তিত, তখন ভারত স্বচ্ছ শক্তি উৎপাদন ও ব্যবহারে অনেকটা এগিয়ে গেছে। শ্রী মোদী বলেন, শক্তি ক্ষেত্রে ভারত আত্মনির্ভর হলে সে বাবদ হওয়া খরচ দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যাবে।

ন্যাশনাল ডিপ ওয়ার্টার এক্সপ্লোরেশন মিশনের মাধ্যমে ভারত সমুদ্রের গভীর থেকে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু করতে চলেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।  

গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ ক্ষেত্রেও দেশ আত্মনির্ভরতার পথে এগিয়ে চলেছে। এর জন্য ১২-শোর বেশি জায়গায় খননে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

২০৪৭ সালে ভারতীয় স্বাধীনতার ১-শো বছরে বিকশিত ভারত গঠনের লক্ষে দেশ এগিয়ে চলেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে যুব সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতা বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি। এপ্রসঙ্গে তিনি ইউ পি আই ব্যবস্হার সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন।

কোভিডের সময় কো-উইন প্ল্যাটফর্মের মতো প্রযুক্তি বিশ্বকে ভারতের সক্ষমতা দেখিয়েছে বলেও তিনি জানান।

রাসায়নিক সারের ব্যবহার কম করে দেশে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের প্রয়াস চালাতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। দেশ থেকে ৪ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি পণ্যের রফতানি হয়েছে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি, ফসল বীমা যোজনার মতো প্রকল্প কৃষকদের জন্য সহায়ক হয়েছে। কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার কোনরকম আপোষ করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এবিষয়ে কোন চাপের কাছেও নতিস্বীকার  করা হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির প্রশংসা করে শ্রী মোদী বলেন, সরকারের সহযোগিতায় আজ ওই গোষ্ঠীগুলি অন্য দেশেও তাদের উৎপাদিত সামগ্রী রফতানি করছে। নারীশক্তির ভূমিকার প্রশংসা করে দেশ গঠনে মহিলাদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্টার্টাপ থেকে শুরু করে মহাকাশ সব ক্ষেত্রেই নারীরা তাদের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ২ কোটি মহিলা লাক্ষপতি দিদিতে পরিণত হয়েছেন।

দেশে কয়েক লক্ষ স্টার্টাপের সূচনা হয়েছে। মুদ্রা যোজনার মতো প্রকল্পে লাভবান হচ্ছে যুব সম্প্রদায়। ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং মিশনে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।

বিশ্ববাজারে উৎপাদিত সামগ্রী পৌঁছে দিতে জিরো ডিফেক্ট পণ্য তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রী মোদী এদিন বিকশিত ভারত রোজগার যোজনার সূচনার কথা ঘোষণা করেন। এতে প্রথমবার চাকরি পাওয়া যুবক-যুবতীরা উৎসাহ ভাতা পাবেন।

দেশের স্বাধীনতা অর্জনে বহু মানুষ আত্মবলিদান দিয়েছে। সমৃদ্ধ ভারতের লক্ষ্যমাত্রা পুরণে রাজনৈতিক দলাদলি ভুলে ভোকাল ফর লোকাল মন্ত্রকে সামনে রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

কোন স্বার্থে ভারতকে ব্যবহার করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের অগ্রগতিতে সরকার নানা সংস্কারের পথে হেঁটেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সাধারণ মানুষের জীবন আরও সরল করতে কাজ করে চলেছে সরকার। তা সে নতুন আয়কর আইন হোক কিংবা ভারতের ন্যায় সংহিতা বলবৎ – সব ক্ষেত্রেই সংস্কার হয়েছে।

ভারতের অর্থনীতি আজ দুনিয়ার কাছে আকাঙ্খার উৎস বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন দেশে মুদ্রাস্ফীতি এখন নিয়ন্ত্রণে। বৈদেশিক মুদ্রাভান্ডার অত্যন্ত শক্তিশালী। বিভিন্ন গ্লোবাল রেটিং এজেন্সি ভারতীয় অর্থ ব্যবস্হার অগ্রগতিকে প্রশংসা করেছে।

সুশাসন সরকারের মূল মন্ত্র বলে জানিয়ে শ্রী মোদী বলেন, সামাজিক ন্যায়কে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী সরকার। দরিদ্র, দলিত, আদিবাসী সবার উন্নয়নে তাঁর সরকার কাজ করে চলেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,  সরাসরি সুবিধা হস্তান্তর এবং প্রকল্প প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, তাদের দারিদ্র থেকে বের করে আনতে সহায়ক হচ্ছে।

মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলের ২-শোতম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে সরকার নানা কর্মসূচীর সূচনা করেছে বলে এদিন জানান প্রধানমন্ত্রী। খেলাধুলোয় বিভিন্ন পরিবারকে শিশুদের উৎসাহিত করা উচিত বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশে ক্রীড়া পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকার খেলো ভারত প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি ওবেসিটি বা স্থুলত্বের সমস্যা কমাতে সরকার উদ্যোগী হয়েছে। তিনি খাবারে তেলের ব্যবহার অন্তত ১০ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা যত সমৃদ্ধ হবে দেশের সংস্কৃতি ততোই মজবুত হবে। সরকার মারাঠী, পালি, বাংলা, তামিলের মতো ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়ে এর প্রসারে অবদান রেখেছে।

দেশ সেবায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র মাতৃভূমির কল্যাণে এই সংগঠন নিরন্তর কাজ করে চলেছে। সংঘের ১-শো বছরের পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী সকল স্বয়ং সেবককে অভিনন্দন জানান। তিনি আর এস এস-কে বিশ্বের সব থেকে বড় অসরকারী সংগঠন বলেও অবিহিত করেন।