রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলেছেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে নাগরিকদের ভোটাধিকার বিশ্বের অন্য বহু দেশ থেকে ভারতকে স্বতন্ত্র করে রেখেছে। এর মাধ্যমেই ভারতবাসীর হাতে দেশের ভবিষ্যত্ নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ঔপনিবেশিক শাসনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভারতবাসী এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছিল। বহু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারত সফলভাবে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটিয়েছে, তার কারণ হিসাবে রাষ্ট্রপতি দেশের প্রাচীন গণতন্ত্রের মূল্যবোধ এবং ভারত যে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সাধারণতন্ত্র, তারও উল্লেখ করেন।
শ্রীমতি মুর্মু বলেন, সংবিধান গ্রহণ করে দেশ একাধিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে, যা আমাদের গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে আরও শক্তিশালী করেছে। সংবিধানে উল্লিখিত গণতন্ত্রের চার স্তম্ভ – ন্যায়, স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সভ্যতার এই মূল্যবোধ পুনরাবিষ্কার করা হয়। সব মানুষ যে সমান এবং তাদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার করা উচিত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সমান সুযোগ সকলের পাওয়া উচিত, এটাই মানবিকতকার মূল ভিত্তি বলে শ্রীমতি মুর্মু উল্লেখ করেন।
সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর হচ্ছে এবং আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল ও রাজ্যগুলিও তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলেছে বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন। গত দশকে পরিকাঠামো উন্নয়নের উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় মহাসড়ক ও রেল পথের বিকাশে নতুন নতুন নজির সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রকল্প হিসাবে আয়ুষ্মান ভারতের উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ৫৫ কোটিরও বেশি মানুষকে এর আওতায় আনা হয়েছে। সত্তরোর্ধ্ব সব প্রবীণ নাগরিককে আয় নির্বিশেষে এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতির কথা জানিয়ে শ্রীমতি মুর্মু বলেন, দেশের প্রায় সব গ্রামেই ফোর জি মোবাইল সংযোগ এসে গেছে।
বাকি অল্প কয়েক হাজার গ্রামেও শীঘ্রই এই সংযোগ এসে যাবে। ডিজিটাল পেমেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারত এক্ষেত্রে বিশ্বে সেরা জায়গা করে নিয়েছে। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে।
সামাজিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ এবং সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে ২০৪৭ সালে ভারত উন্নত দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে রাষ্ট্রপতি জানান। এই অমৃতকালে দেশবাসী তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান যোগাচ্ছে। যুবা ও মহিলা সম্প্রদায় তাদের অন্যতম। জাতীয় শিক্ষানীতি দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে
সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন এনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে বলে রাষ্ট্রপতি অভিমত প্রকাশ করেন।
সুশাসন এবং দুর্নীতি মুক্ত সমাজের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মহাত্মা গান্ধীর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, দুর্নীতি এবং কপটতা গণতন্ত্রের কখনই অঙ্গ হতে পারে না।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলার উল্লেখ করে শ্রীমতি মুর্মু বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানবিকতার লড়াইয়ে অপারেশন সিন্দুর উদাহরণ হিসাবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।