রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলায় সাম্প্রতিক হিংসা ও অশান্তির ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য রাজ্য সরকারকে উদ্যোগী হতে বলেছেন। পাশাপাশি বিরোধীদের তোলা যাবতীয় অভিযোগ ও প্রস্তাব খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। গতকাল বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ৫০ জন বিজেপি বিধায়ক রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা রাজ্যপালের হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দেন। সেখানে ডায়মন্ড হারবারে আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের আর্জি জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন, তদন্ত জাতীয় তদন্ত সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া, রবীন্দ্রনগর থানার ওসি-কে গ্রেফতার এবং হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চেয়ে দাবি তোলা হয়েছে।
রাজ্যে বাঙালী হিন্দুদের শরণার্থীতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে বলে বিজেপি অভিযাগ করেছে। গতকাল এক্স হ্যান্ডেলে দলের রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেন, শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদতে এই চক্রান্ত চলছে। মৌলবাদীরা যেভাবে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর নীরবতা ও তোষণের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুকান্তবাবু।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলার ঘটনায় আক্রান্ত হিন্দুদের সঙ্গে দেখা করতে গতকাল সুকান্ত মজুমদার সহ বিজেপি নেতারা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপরই বিজেপি নেতারা কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিজেপি লড়াই করবে বলে সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন।
মহেশতলার ঘটনা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে জরুরী ভিত্তিতে শুনানির আবেদন জানান, বিরোধী দলনেতা। ডিভিশন বেঞ্চ মামলা দায়ের করার অনুমতি দিলেও, জরুরী ভিত্তিতে শুনানির আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
মহেশতলার ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলের প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন গতকাল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মুলতুবি প্রস্তাব এনে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে। অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়
সেই দাবি খারিজ করে দিলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিরোধীরা। ঘন্টাখানেক পর বিজেপি বিধায়করা ‘ওয়াক আউট’ করেন।
মহেশতলায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে এপর্যন্ত ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহেশতলা এলাকার সর্বত্র জারি রয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ নম্বর ধারা।
মহেশতলায় দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। গতকাল সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, রাজ্যে দুষ্কৃতী, সমাজবিরোধীরা লাগাতার জনজীবন ব্যাহত করলেও সম্পূর্ণ নির্বিকার প্রশান। বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস দুই পক্ষই সংঘর্ষের ঘটনায় রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।