ওয়াকফ সংশোধনী বিল-২০২৫ সংসদে পাশ হয়েছে। গতকাল মধ্যরাত্রের কিছু পরে রাজ্যসভাতে বিলটি অনুমোদিত হয়। বিলের পক্ষে ভোট পড়েছে ১২৮-টি। বিপক্ষে ৯৫-টি। প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে রাজ্যসভায় বিল নিয়ে আলোচনা চলে। লোকসভায় আগেই বিলটি ছাড়পত্র পেয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্হাপনা, ঐতিহাসিক স্হানগুলিকে সুরক্ষিত রাখা এবং সমাজ কল্যাণের প্রসারের উদ্দেশ্যেই এই বিল আনা হয়েছিল। ওয়াকফ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণে স্বচ্ছতা, ওয়াকফ বোর্ড এবং স্হানীয় প্রশাসনের মধ্যে আরও ভালো যোগাযোগ রক্ষা এবং অংশীদারদের অধিকার সুনিশ্চিত করার সংস্হান রয়েছে এই বিলে। পাশাপাশি মুসলমান মহিলাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্হার উন্নয়নে বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে।
গতকাল বিলের ওপর আলোচনার সময় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, কয়েক কোটি দরিদ্র মুসলমান সম্প্রদায়ভূক্ত মানুষ এই বিল থেকে উপকৃত হবেন। ওয়াকফ সম্পত্তিতে কোন হস্তক্ষেপ করবে না এই বিল। নরেন্দ্র মোদী সরকার সবকা সাথ- সবকা বিকাশ – এর দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কাজ করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। শ্রী রিজিজু বলেন,দরিদ্র এবং পোষমন্দা মুসলমানরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিলে দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে ২২ জন সদস্য থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন। চারজনের বেশি অমুসলমান সদস্য এই কাউন্সিলে থাকতে পারবেন।
অন্যদিকে, ওয়াকফ বোর্ডের ১১ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৩ জন অমুসলমান সদস্য থাকতে পারবেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কংগ্রেসের ডক্টর সঈদ নাসির হুসেন বলেন, বিলটি বিভ্রান্তিকর এবং সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। বিজেপি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করতে চাইছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তাঁকে থামিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্ বলেন, বিরোধীরা আসলে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথ্যা সভার নেতা জে পি নাড্ডা বলেন, ওয়াকফ ব্যবস্হাপনাকে আরো ক্ষমতায়িত করতে এতে দক্ষতা আনতে সভার সকলের বিলটিকে সমর্থন করা উচিত। এই বিলের মূল উদ্দেশ্য, সংস্কার এবং ওয়াকফ সম্পত্তিগুলির যথাযথ ব্যবস্হাপনা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ডি এম কে-র তিরুচিশিবা বলেন, বিলের বিরোধিতা করে বলেন, কয়েকটি সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিশানা করা হচ্ছে। বিলটিকে ধর্ম নিরপেক্ষতা বিরোধী এবং অসাংবিধানিক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের নাদিমূল হক বলেন, এই বিল মানুষের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করে । আম-আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং এই বিলকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করে সরকারের কাছে বিলটি প্রত্যাহারের আর্জি জানান।
আর জে ডি-র অধ্যাপক মনোজ কুমার ঝা বিলটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বিজেপি-র রাধামোহন দাস বলেছেন, কংগ্রেসের আমলে দরিদ্র মুসলমানদের কোন উন্নতি হয়নি। নরেন্দ্র মোদী সরকার মুসলমান সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য এই বিল এনেছেন।
জে ডি এস প্রধান এইচ ডি দেবে গৌড়া ওয়াকফ সংশোধনী বিল -২০২৫ নিয়ে আসার জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠীর সাংসদ সঞ্জয় রাউথ বলেন, এই বিল দেশের পরিপন্থী।
বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খার্গে বিলের বিরোধিতা করে অবিলম্বে এটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এই বিলে অনেক খামতি রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সামাজিক ন্যায় বিচার ও ক্ষমতায়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী রামদাস আঠাওয়ালে, কংগ্রেসের অভিষেক মনুসিংভি, এন সি পি-র প্রফূল প্যাটেল, মনোনীত সাংসদ গুলাম আলি, শিবসেনার মিলিন্দ দেওরা প্রমুখ বিতর্কে অংশ নেন।
সংসদে মুসলমান ওয়াকফ (রদ) বিল-২০২৫ও অনুমোদন হয়েছে।