মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন

android apple
signal

August 14, 2025 9:05 PM

printer

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু স্বাধীন ভারতে সর্বজনীন ভোটাধিকারের উল্লেখ করে বলেছেন, এর ফলেই ভারতবাসীর হাতে দেশের ভবিষ্যত্ নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু স্বাধীন ভারতে সর্বজনীন ভোটাধিকারের উল্লেখ করে বলেছেন, এর ফলেই ভারতবাসীর হাতে দেশের ভবিষ্যত্ নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে নাগরিকদের এই ভোটাধিকার বিশ্বের অন্য বহু দেশ থেকে ভারতকে স্বতন্ত্র করে রেখেছে। ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক সন্ধ্যায় জাতির প্রতি ভাষণে রাষ্ট্রপতি শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ঔপনিবেশিক শাসনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভারতবাসী এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছিল। বহু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারত সফলভাবে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটিয়েছে, তার কারণ হিসাবে রাষ্ট্রপতি দেশের প্রাচীন গণতন্ত্রের মূল্যবোধ এবং ভারত যে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সাধারণতন্ত্র, তিনি তারও উল্লেখ করেন।

শ্রীমতি মুর্মু বলেন, সংবিধান গ্রহণ করে দেশ একাধিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে, যা আমাদের গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে আরও শক্তিশালী করেছে। স্বাধীনতার পাশাপাশি দেশ ভাগের বেদনার উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস পালনের মধ্য দিয়ে সেই হিংসা এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের উদ্বাস্তু হওয়ার বিষয়টি আমরা স্মরণ করেছি। সংবিধানে উল্লিখিত গণতন্ত্রের চার স্তম্ভ – ন্যায়, স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সভ্যতার এই মূল্যবোধ পুনরাবিষ্কার করা হয়। সব মানুষ যে সমান এবং তাদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার করা উচিত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সমান সুযোগ সকলের পাওয়া উচিত, এটাই মানবিকতকার মূল ভিত্তি বলে শ্রীমতি মুর্মু উল্লেখ করেন।

স্বাধীনতা লাভের পর গত ৭৮ বছরে সব ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতির উল্লেখ করে শ্রীমতি মুর্মু বলেন যে, ভারত সবদিক দিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার পথে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে।

গত অর্থ বছরে সাড়ে ৬ শতাংশ জিডিপি বিকাশ হারের উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বের বৃহত্ অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারত দ্রুত জায়গা করে নিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে চাপের মধ্যেও ভারতে চাহিদা বাড়ছে, মুদ্রস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, রপ্তানি বাড়ছে, সবকটি সূচকই অর্থনৈতিক সুস্বাস্থ্যের ইঙ্গিত করছে বলে শ্রীমতি মুর্মু মন্তব্য করেন।

সুশাসনের ফলে বহু মানুষের দারিদ্র মুক্তি ঘটেছে এবং বহু কল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দারিদ্র সীমার উর্ধ্বে ওঠা লোকেরা যাতে আবার তার নীচে নেমে না যায়, তা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর হচ্ছে এবং আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল ও রাজ্যগুলিও তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলেছে বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন। গত দশকে পরিকাঠামো উন্নয়নের উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় মহাসড়ক ও রেল পথের বিকাশে নতুন নতুন নজির সৃষ্টি হয়েছে। কাশ্মীর উপত্যকার সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপন করা এক বড় সাফল্য বলে উল্লেখ করে শ্রীমতি মুর্মু বলেন, প্রযুক্তিগত দক্ষতার এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসাবে কাশ্মীরের রেল সংযোগ চিহ্নিত হয়ে থাকে।

গত এক দশকে দেশের বহু শহরে মেট্রো রেল পরিষেবা বৃদ্ধি পেয়েছে। অম্রুত প্রকল্পে আরও বেশি সংখ্যক বাড়িতে নিশ্চিত জল সরবরাহ ও পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে নলবাহিত জল সরবরাহের ক্ষেত্রে জল জীবন মিশনের কথাও শ্রীমতি মুর্মু বলেছেন।

বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রকল্প হিসাবে আয়ুষ্মান ভারতের উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ৫৫ কোটিরও বেশি মানুষকে এর আওতায় আনা হয়েছে। সত্তরোর্ধ্ব সব প্রবীণ নাগরিককে আয় নির্বিশেষে এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতির কথা জানিয়ে শ্রীমতি মুর্মু বলেন, দেশের প্রায় সব গ্রামেই ফোর জি মোবাইল সংযোগ এসে গেছে। বাকি অল্প কয়েক হাজার গ্রামেও শীঘ্রই এই সংযোগ এসে যাবে। ডিজিটাল পেমেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারত এক্ষেত্রে বিশ্বে সেরা জায়গা করে নিয়েছে। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। গোটা বিশ্বের মোট ডিজিটাল লেনদেনের অর্ধেকেরও বেশি এই ভারতে এখন হচ্ছে। এই গতিশীল ডিজিটাল অর্থনীতির কারণে দেশের জিডিপি প্রতি বছর বাড়ছে।

প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পরবর্তী ধাপ হিসাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ‘ভারত এআই মিশন’ চালু হয়েছে। ভারতের নির্দিষ্ট চাহিদা মত এআই মডেল তৈরি হচ্ছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষেত্রে বিশ্ব কেন্দ্র রূপে গড়ে তুলতে সাধারণ মানুষের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুশাসন বৃদ্ধির লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।

সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের উন্নতি সাধনের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে দেশ দৃঢ়় প্রত্যয়ের সঙ্গে ‘বিকশিত ভারত’-এর পথে এগিয়ে চলেছে বলে শ্রীমতি মুর্মু জানান।

৭ ই আগস্ট জাতীয় হস্তচালিত তাঁত দিবসের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বদেশী আন্দোলনের স্মরণে ২০১৫ সাল থেকে এই দিনটি পালন করা হচ্ছে। সামাজিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ এবং সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে ২০৪৭ সালে ভারত উন্নত দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে রাষ্ট্রপতি জানান। এই অমৃতকালে দেশবাসী তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান যোগাচ্ছে। যুবা ও মহিলা সম্প্রদায় তাদের অন্যতম। জাতীয় শিক্ষানীতি দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন এনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে বলে রাষ্ট্রপতি অভিমত প্রকাশ করেন।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে শুভাংশু শুক্লার যাত্রা এবং গগনযানের কথাও রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন।

২০২৫ এর জাতীয় ক্রীড়া নীতিতে ভারত একদিন বিশ্ব ক্রীড়া ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফিডে মহিলা বিশ্বকাপ দাবায় ভারতের সাফল্য এবং নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়মের কথাও রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন।

তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক জনজাতির মানুষজনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক আশা আকাঙ্খা পূরণে সরকার তাদের সক্রিয়ভাবে সাহায্য করছে বলে তিনি জানান।

সুশাসন এবং দুর্নীতি মুক্ত সমাজের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মহাত্মা গান্ধীর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, দুর্নীতি এবং কপটতা গণতন্ত্রের কখনই অঙ্গ হতে পারে না।

কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলার উল্লেখ করে শ্রীমতি মুর্মু বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানবিকতার লড়াইয়ে অপারেশন সিন্দুর উদাহরণ হিসাবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

পরিবেশ সুরক্ষায় রাষ্ট্রপতি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে জল, জমি, পাহাড়, জঙ্গল ও ফুল ফল পাতা লতার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এভাবেই সমৃদ্ধ প্রকৃতির এক পৃথিবী আমরা গড়ে তুলতে পারবো বলে শ্রীমতি মুর্মু জানান।

সীমান্ত রক্ষায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের বিচার বিভাগ এবং সিভিল সার্ভিসের আধিকারিকদের প্রতিও রাষ্ট্রপতি অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় এবং দূতাবাসগুলির আধিকারিকদেরও শ্রীমতি মুর্মু অভিনন্দন জানান।      

সবচেয়ে বেশি পঠিত

সব দেখুন